সৃজনশীলতা: প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা 

প্রতিনিধি | সম্পাদকীয়

শনিবার ১২ অক্টোবর ২০১৯|১০:৪৪:০৭ মি.


সম্পাদক

‘সৃজনশীলতা’কে সামর্থ্য বা ক্ষমতার আঙ্গিকে মূল্যায়ন করা যায়। অর্থাৎ নতুন কোনো পরিবেশে নতুন করে ভাবার এবং ভেবে নতুন কিছু উদ্ভাবন করার ক্ষমতা বা সামর্থ্যকে সৃজনশীলতার প্রতি নির্দেশ করে। সকল মানুষই কম বা বেশি সৃজনশীল। অন্য সকল গুণের মধ্যে সৃজনশীলতা হলো এমন এক মৌলিক বৈশিষ্ট্য যা আরো বহু গুণের উদ্গতা। অর্থাৎ সৃজনশীল মানস ব্যক্তি মানুষকে আরো বেশি উন্নত মানুষে পরিণত করে। ব্যক্তির আচরণে ধনাত্মক পরিবর্তন ঘটানোয় সৃজনশীলতার গুণটি বেশ কার্যকরী। সদা ক্রিয়াশীল এবং চৈতন্য নির্মাণের  সামগ্রিক  পরিকাঠামোতে সৃজনশীলতা অনন্য ভূমিকাদায়ী। শিক্ষণ-পরিণমন ব্যক্তিকে সমসাময়িক করে গড়ে তুলতে পারলেও সৃজনশীলতার গুণটিকে ক্রম চর্চায় আরো বেশি উন্নীত না করলে ব্যক্তির বেড়ে ওঠায় একটা বিশেষ ঘাটতি থেকেই যায় শেষ পর্যন্ত। সে বহু কিছু শিখেও  কোনো কিছুকেই কাজে লাগাতে পারে না। বা পারলেও পূর্বসূরীর মতোই একই বিষয়কে নকল বা নকলেরও নকল করতে থাকে। নতুন কিছু ভাবা বা নতুন কিছু করার ক্ষেত্রে যে বিশেষ ঘাটতি তা হলো—‘সৃজনশীলতার অভাব’। অনেক তথ্য এবং তত্ত্বের  জ্ঞানও বিফলে যায়। কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে ব্যক্তির সামগ্রিক শিক্ষার পরিপূরক এই সৃজনশীলতাকেই মাধ্যম হিসেবে মৌলিক বিবেচনা করা হয়। সে তার একান্ত নিজস্ব উদ্ভাবনী চিন্তার প্রায়োগিক তাৎপর্যকে বিশেষায়িত করে শিল্পকে জ্ঞানে পর্যবসিত করে।
শিশুর মানসিক বিকাশে সৃজনশীলতার চর্চা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল মৌলিক বিষয়াদির শিক্ষা লেখার মতোই সৃজনশীলতা চর্চার শিক্ষাও দিতে হয়। অভিভাবক নিবিষ্ট মনে এই কাজটি করতে সক্ষম হলে সন্তানের মানসিক পরিবৃদ্ধি সুষম হয়। জীবনের একদম শুরুর দিকে শিশু যে বিষয় ক’টি তার অভিভাবকের কাছ থেকে দীক্ষা নেয় তা হলো নিজে নিজে পায়খানা-প্রস্রাব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করতে পারে, নিজ হাতে খাওয়া, ঘুম-খেলা ইত্যাদির সময়গুলোকে চিহ্নিত করতে পারার শিক্ষা। অভিভাবকবৃন্দ নিয়মানুবর্তী হওয়া, শারীরিক পরিশ্রম করা, পড়ালেখা এবং ভ্রমণের মাধ্যমে অনেক তথ্য অর্জন করার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। ধর্মীয় অনুশাসন চর্চা, সামাজিক মানুষ হয়ে ওঠার চর্চা, নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার চর্চা ইত্যাদিতে শিশু প্রাথমিক শিক্ষা পেয়ে থাকে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, নিকটাত্মীয়ার কাছ থেকেই। পরবর্তীকালে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সে আরো বেশি তথ্য লাভ করে পড়ালেখার মাধ্যমে। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি তার শিক্ষা বা তথ্য গ্রহণ চলতেই থাকে। জীবনের সামগ্রিক শিক্ষাকে কাজে লাগাতে তাই তার প্রথম থেকেই সৃজনশীলতার চর্চা করতে হয়।
সৃজনশীলতার চর্চা কথাটিতে দু’টো বিশেষ অংশ বিদ্যমান। প্রথমত সৃজনশীল মানসিক চিন্তন প্রক্রিয়া এবং দ্বিতীয়ত সে অনুযায়ী বাস্তবে একটা কিছু করা , নির্মাণ বা লেখা। মানুষ যেহেতু জন্মগতভাবেই সৃজনশীল তাই তার মস্তিষ্কের চিন্তন প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই একটা উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্য কাজ করে। সে নতুন নতুন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য নিজ থেকেও নতুন কোনো কৌশল আবিষ্কার করতে পারে। কখনো এমন কিছুও পারে যা-র কোনো সমকালীনতার তাৎপর্যে অর্থ নেই। হতে পারে তা পরবর্তী অনাগত কোনো কোনো সময়ের মহামূল্যবান আবিষ্কার। সে যাইহোক মানুষের সামগ্রিক বিকাশে এই যে, ‘নতুন কিছু করা’ একটা বিশেষ মূল্যবান বিষয়। নতুন কিছু চিন্তা করা বা করা যেহেতু পুরানোর পথ ধরে আসে তাই পূর্ববর্তী বা পুরানোকে ভালভাবে বোঝার ক্ষমতা অর্জন করা বিশেষ জরুরি। যে কাজটি শিক্ষার মাধ্যমে হয়ে থাকে। যেটি হয় না কিন্তু হওয়াটা জরুরি তাহলো তথ্যসমূহের মধ্যে সংযোগ ঘটানো। একাধিক তথ্যের যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ জরুরি। কল্পনা আর বাস্তবের সীমা-পরিসীমা অনুধাবন করা জরুরি। আহরিত তথ্যকে তত্ত্বের অনুসন্ধান—রসায়ন প্রয়োজন। রান্নার যেমন রেসিপি। বই পড়ে বা অন্যের নিকট শিখেও যেমন রান্না করা যায় কিংবা নিজের রসায়নে নিজেই চিন্তার বৃহৎ জগতে পরিভ্রমণ করে অতঃপর নিজেই নতুন নতুন ‘স্বাদ’ তৈরির মহা কর্মযজ্ঞে নিজেকে আবিষ্কার করাও যায়।
সৃজনশীলতার চর্চা করা যেহেতু বেড়ে ওঠার নিয়ামক। তাই শিশুকে একদম প্রথম থেকেই এই কর্মে প্রবিষ্ট করানো প্রয়োজন। এটা এমন নয় যে, শুরুতেই রঙ, তুলি বা কাগজ কলম দিয়ে শিল্পী বা কবি বানিয়ে ফেলার চিন্তা করা।  বরং নানা ধরনের বস্তু চেনানো, প্রাণী, ফুল, ফল, গাছ, কীট-পতঙ্গ মোটকথা আশপাশের সকল কিছু চেনানো। গরম, ঠান্ডা, শুকনা বা ভেজা, খসখসে বা পিচ্ছিল ইত্যাদির মতো সকল অনুভব তার নজরে নিয়ে আসা। স্বাদের ক্ষেত্রেই লবণাক্ত, তিতা , কি মিষ্টি ইত্যাদিকে।
গভীরভাবে অনুধাবণ করানো। কয়েক প্রকার মিষ্টির মিষ্টতার ভিন্নতা বোঝানোর দায় তো অভিভাকেরই। তবেই তো একজন শিশু স্বাদ, রুচি, নান্দনিক মূল্যবোধে নিজস্ব ব্যক্তিত্বের পরিকাঠামো লাভ করবে। যেহেতু জনে জনে ব্যক্তিত্ব ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করার জন্য অভিভাবক-শিক্ষকের প্রয়োজন শিশুকে তার নিজের মতো করে চিন্তা করার আগ্রহী করে তোলা। সে নিজের মতো করে যেমন চিন্তা করবে, তেমনি নিজের মতো করে যে কোনো কাজ করতে পারে। শিশুকে তথ্য দিয়ে, জানিয়ে, বুঝিয়ে দিয়ে অতঃপর তাকে সময় দিতে হবে নিজের মতো করে চিন্তা করার। কাজটি শুরু করার সময় থেকেই তাকে সাহস, উৎসাহ দিতে হবে। অকাতরে প্রশংসা করতে হবে। নতুনভাবে সে যা করলো বা করার চেষ্টা করছে, তা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে গভীর অনুধ্যানী হয়ে বোঝা বা বোঝার চেষ্টা করবেন অভিভাবক। ভালোভাবে খেয়াল না করলে শিশুর সৃজনশীলতাকে বোঝা সম্ভব হবে না।
শিশু জগৎসংসার থেকে তথ্য গ্রহণ করতে থাকে অনবরতই। তার জানার পরিধি ক্রমে বাড়তে থাকে। সে দেখে, অনুভব করে, বুঝে, শুনে চিন্তার জগতকে পরিবৃত করার চলমান একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়ে। সে তার অজান্তেই অংকের বৃহৎ পরিম-লে প্রবেশ করে। আর ঠিক এখান থেকেই জীবনবোধের নানাবিধ নতুন নতুন রসায়ন অনুভব করতে থাকে। তাকে তার মতো করে ভাবার, বোঝার এবং প্রকাশ করার সুযোগ বা স্বাধীনতা  প্রদান করতে পারলে অভাবনীয় সাফল্য আসবে। পূর্বে কেউ কোনোদিন ভাবেননি, সেভাবে প্রকাশও করতে পারেননি এমনই নতুন নতুন বিষয় বা আঙ্গিক প্রকাশে সে সাবলীল হয়ে উঠবে। পৃথিবীতে যতো জ্ঞানী-গুণী বিখ্যাত মানুষ দেখা যায় তাদের সকলেই শিশু সময়কাল থেকেই যে কোনো বিষয়কে তার নিজের মতো করে দেখার বা বোঝার এবং প্রকাশ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়োজিত ছিলো।
স্বাধীনচেতা, সদাক্রিয়াশীল, চঞ্চল কিংবা অন্তর্মুখী এমন যেকোনো শিশুকেই বেশিরভাগ অভিভাবক-শিক্ষক শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করার জন্যে একটি প্রটো-টাইপ আচরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে অগ্রসর হয়ে থাকেন। একজন থেকে আরেকজনের ভিন্নতার ব্যাপারে তার কোনো মনোযোগ থাকে না। তাছাড়া নিজের সমস্ত ইগো, অনুভব, জানা-বোঝা বা কৌশল সবকিছু গণভাবে প্রয়োগ করে থাকেন। ফলতঃ দু’একজন তার শিক্ষণশৈলীর ফল লাভ করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ব্যর্থ হয়।
শিশুর প্রত্যেকটি আচরণকে কাজে লাগিয়েই ধনাত্মক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে সৃজনশীল করে গড়ে তোলা যায়। ভিন্ন ভিন্ন শিশু ভিন্ন ভিন্নভাবে ‘কাক্সিক্ষত ফলাফল’ অর্জন করতে পারে। গভীরভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন মূলতঃ এই ভিন্নভাবে করতে পারার প্রক্রিয়াটি। তাকে এখানেই উৎসাহ উদ্দীপনা দিতে হবে। অথচ ঘটে থাকে অন্যরকম। ‘কাক্সিক্ষত ফলাফল’টি অতিদ্রুত এমনকি না বুঝেও যদি কোনো শিক্ষার্থী করে ফেলতে পারে তাতেই শিক্ষক-অভিভাবক খুশি হয়ে উঠেন। সেই খুশিতে শিশুও খুশি হয়। চলমান এই ‘না বুঝে’ করা বা শেখার কার্যক্রমটি অতঃপর নিস্ফলতার এবং জঞ্জাল রচনা করে। কপি দেখে বা মুখস্থ করার মাধ্যমে হয়ে থাকলে চিন্তা জগতে কোনই ভাল পরিবর্তন আনতে পারবে না। বর্তমান সময়ে চলতে থাকা ‘পরীক্ষা’ নামক বিষয়টিকে তাই আজ অনেকেই অযোগ্য মনে করছেন। এই মুখস্থ  করে এসে হুবহু লিখে নেয়ার  বা বানিয়ে লেখার পরীক্ষা নামক পদ্ধতিটি বাতিল করতে শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয়কে মৌখিকভাবে উপস্থাপন বা ব্যবহারিকভাবে করিয়ে ফেলানোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন অনেকেই। আর এই বিষয়টি হয়ে উঠলে শিক্ষার্থী সত্যিকার সৃজনশীল হয়ে উঠবে। তার চিন্তার পরিধি বেড়ে যাবে। সে সত্যিকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবে। সমাজ সভ্যতার শেখার মতো কিছু একটা থাকবে তারও। গৌরবধারী শিক্ষার্থীবৃন্দ সমাজে নিজেদের আর অপাঙক্তেয় ভাববে না। ফলতঃ সে আর খারাপ কোনো পথ বেছে নিতে চাইবে না। এমন শিক্ষার্থীরাই নিজের সৎ, দেশপ্রেমিক এবং সকল ভাল গুণের পরিচর্যার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করবে।
সৃজনশীলতার পথ পরিক্রমায় যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—তথ্য গ্রহণ করা, চিন্তা করার বা নতুন করে ভাবার ক্ষমতা অর্জন করা, বিষয়সমূহের মধ্যকার সাদৃশ্য-বৈশাদৃশ্য বোঝা, তুলনা করার ক্ষমতা, ভালো-মন্দ বিচারের ক্ষমতা, সময়বোধ, দেশ-কাল বিবেচনা, ব্যক্তির অনুভূতিকে বোঝা, সামাজিক ও নাগরিক বোধ, নান্দনিকতার বোধ, বিজ্ঞানমনস্কতা, নতুন বিষয়, স্বাদ-দৃষ্টিভঙ্গিকে মূল্যায়নের ক্ষমতা ইত্যাদি শিক্ষার্থী তথা শিশুর জীবন চলার প্রতিটি ধাপেই এই বিষয়গুলো তার জ্ঞানের সীমানায় আসতে থাকে। শুধু প্রয়োজন তাকে গভীরভাবে এই সকল বিষয় অত্যন্ত সহজ করে উপলব্ধি করানো। এই উপলব্ধি করানোর প্রক্রিয়াটি জটিল বটে। বেশিরভাগ শিক্ষক-অভিভাবক এই জটিল বিষয়টিকে গ্রহণ করতে চান না। চান না এই কারণে যে, এখানে খাটুনী বেশি। নিজেকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। রাগ-বিরাগ-অনুরাগ ঝেড়ে ফেলে শিক্ষার্থী শিশুর উপর প্রশংসার বৃষ্টি ঝরাতে হয় ক্রমাগত; যা অনেক কষ্টের, ত্যাগ-তিতিক্ষার, কখনো বেদনারও। সৃজনশীল করে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার্থীর হাজারো ভুল বা নষ্ট করে ফেলা লেখা, অংক বা আঁকাকেও আপনার প্রশংসা করতে হবে। প্রশংসা মূলতঃ করছেন তার চেষ্টাকেই। তবে চেষ্টার ফলশ্রুতি যে লেখা বা আঁকা তা-ও আপনাকে ভালো বলতে হবে। প্রথমত তা পরে বলবেন, আরো চেষ্টা করলে আরো ভাল আরো সুন্দর করতে পারবে তুমি। এগিয়ে যাও। তোমাকে দিয়েই হবে। এইসব বলতে হবে, আদর দিয়ে কাছে টেনে। বিশ্বাস আর নির্ভরতার একটি জায়গায় নিয়ে যেতে হয় উভয়কেই। 
অনেক অভিভাবক মনে করেন শিশু সৃজনশীল হয়ে উঠলে সে কবি বা শিল্পী হয়ে উঠবে। পরিণত বয়সে একজন কবি বা শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করুক এমনটি অনেক অভিভাবকই চান না। আর চান না বলেই একজন কবি বা শিল্পীর নিজেকে প্রতিষ্ঠার সীমানায় নিয়ে যেতে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে হয়। আর সেই সকল বাধা বা বিপত্তির শুরু হয় পরিবারের মধ্য থেকেই, মা-বাবাই চান না। এর উল্টো চিত্র ঘটে কখনো, তবে তুলনায় তা নগন্য। দেখা যায় কোনো অভিভাবক আশা করেন শিশু শিল্পী বা কবি হোক, লিখুক, আঁকুক। অনেক সময় এই বিষয়টিও সফল হয় না। তার চাওয়া মতো কবি বা শিল্পী হয়ে না-ও উঠতে পারে শিশুটি। এসব বলার উদ্দেশ্য হলো এই যে, আপনি যা চাইবেন সবসময় শিশু ঠিক তা হয়ে উঠবে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা হয় না। তবে যা ঘটে থাকে তা হলো আপনার চাহিদার আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আপনি অনেক বেশি রূঢ় হয়ে উঠেন নিজের অজান্তেই। আপনার সমস্ত ইগোর চরমতম প্রভাব খাটাতে থাকেন। আপনার ব্যক্তিত্ব দিয়ে তার ব্যক্তিত্ব নির্মাণ করার নেয়ার চেষ্টা করেন। আপনার চাহিদার সমান্তরালে তার চাহিদাকে তার লক্ষ্যকে নির্দিষ্ট করে দেন।  আর বিপত্তি ঘটে এখানেই। দু’ একটি উদাহরণ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্তান আপনাকে কিছুই উপহার দিতে পারে না। বিফল হয়ে যায়। সে যে বিষয়টি পারত, যেখানে তার আগ্রহ ছিলো, সেদিকে আপনার জন্যে যেতে পারেনি। এই বিফলতার দায়তো আপনারই। এই বিফল মানুষটি ক্রমশঃই হারিয়ে যায়। একসময় সমাজের দায় হয়ে উঠে।
শিশুকে আঁকতে দিন। নিজের মতো করে আঁকতে দিতে হবে। সব আঁকার প্রশংসা করতে হবে। বড় হওয়ার সাথে-সাথে গান, কবিতা , ছড়া লিখতে দিন। এসব বিষয়গুলো পড়তে যেমন থাকবে, নিজে নিজে নতুন কিছু লিখবেও। আপনার কাজ শুধু প্রশংসা করা। সংরক্ষণ করে এবং  ছবি বাঁধিয়ে, দেওয়ালে ঝুলিয়েও উৎসাহ দেয়া যায়। মোটকথা সকল পড়ালেখা বা চর্চার মধ্যে সে যেনো আঁকাআঁকি, কিছু একটা বানানো, লেখালেখি-নতুন কিছু লেখা, নতুন ভাবনার কিছু করা ইত্যাদি সে যেনো রাখে নিয়মিত। সৃজনশীলতার চর্চা তাকে নিসন্দেহে বড় এক সফল মানুষে পর্যবসিত করবে। সে বড় ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, আমলা, আইনবিদ হয়ে উঠবে। সে যে পেশায় যাবে সেখানেই সে সফল হবে। তার সৃজনশীল মানসিকতা তাকে জীবনের সকল বাধা টপকাতে সাহায্য করবে। গুণী সন্তান গুণী বাবা হয়ে উঠবে।
গাছ-পাতা, ফুল-ফল, দৃশ্য কত কিছুই তাঁর আঁকতে হয়। আঁকতে গিয়ে বা লিখতে গিয়ে সে জীবন সম্পর্কে যে মৌলিক জ্ঞান একদম হাতে কলমে পেয়ে থাকে, তা কখনোই আঁকাআঁকি বা তৈরি করা ছাড়া সম্ভাব নয়। তাকে একজন ভাল মানুষ হিসেবে তৈরি করার লক্ষ্য গ্রহণ করাই জরুরি। মানবিক গুণ সম্পন্ন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হয়ে উঠুক সে। পেশার কোন্ দিকটিতে সে সফল হবে তা সে-ই ঠিক করে নেবে। শুধু পাশে থেকে সাহস, প্রশংসা, উৎসাহ দিন। সৃজনশীল থাকুন আপনিও। হাসি-খুশি থাকুন। জীবনকে উপভোগ করুন।
 

পাঠকের মন্তব্য Login Registration